html

Saturday, April 7, 2018

রিমা দাস

গুটিপোকা 

রিমা দাস   


সকাল আটটা । মোবাইল ফোন বেজে উঠলো । আধা ঘুম আধা জাগা অবস্থায় রাশি ফোনটা রিসিভ করে ঘড়ির দিকে নজর দিলো । না , আর শুয়ে থাকা যাবে না । রাত বারোটা থেকে মাঝরাত পর্যন্ত সে মোবাইলেই ব্যস্ত ছিলো । জন্মদিনের শুভেছা জানিয়ে বন্ধুদের লাগাতর ফোন ।তারমধ্যে স্পেশাল জনের সাথেই তো প্রায় ঘন্টা দেড়েক কেটে গেছে ভাব-ভালোবাসার কথায় ।এখন সকাল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে উইশ করে সেকালেরা । রাশি একালের মেয়ে ,স্বাভাবিক  ভাবে তার জীবনযাত্রার ধরনধারণও একালের । রাতভর ফোনে লেগে থাকা বাবা-মা কেউ একেবারেই পছন্দ করে না ।তারওপর ঐ প্রেমের কথা যেদিন জানবে রাশি নিশ্চিত বাড়িতে সেদিন একটা হিরোশিমা নাগাশাকি হয়ে যাবে ।  যাক গিয়ে এ নিয়ে রাশি এখন মাথা ঘামাতে বিন্দুমাত্র রাজী নয় । তখনকার ব্যাপার তখন দেখা যাবে ।এই জন্মদিন উপলক্ষ্যে সে নিজের ঘনিষ্ঠ ছ-সাতজন  বন্ধুর সাথে রাত আটটার সময় সাকেতের ম্যাকডোনাল্ডসে জমায়েত হবে ।অবশ্য তার আগে বিকেল পাঁচটায় সিরি ফোর্ট চত্বরে অন্যজনের সাথে এপো আছে । মজা করে বলেছে আজ এই স্পেশাল দিনে রাশির সিডিয়ুইসড করার দৌড় কতখানি  তাই দেখবে ।রাশিও চটুলতার সাথে চ্যালেঞ্জটা মনে মনে একসেপ্ট করেছে ।এত খুশীর মাঝেও একটা মন খারাপ থেকে থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পরছে । এবার জন্মদিনে রাঙ্গাঠাকুমার ফোন আসলো না । হয়তো আর আসবেও না । পচাত্তর বছরের ঠাকুমা প্রায় মাস দুয়েক  হলো অসুস্থ।এই সেদিন পর্যন্ত শক্ত সামর্থ্য ছিলো । হঠাৎ করে নিমুনিয়া হয়ে সব বেসামাল হয়ে গেলো ।দিন পনেরো হাসপাতাল থেকে বাড়ী  এসেছে । এখনোও একটা ঘোরের মধ্যে । বাড়ী ফিরলেও ডাক্তার খুব একটা আশাবাদী নয় ।সবাই জানে নাতিনাতনির মধ্যে রাশি তার সবথেকে আদরের । একমাত্র নাতনি বলে ঠাকুমার যাবতীয় আদর ভালোবাসা সে নিজের দিকে টেনে নিয়েছে । কত গল্প শুনিয়েছে ঠাকুমা । তার যুগের গল্প – মেয়েদের গল্প । তাদের মুখে কুলুপ এটে থাকার কথা । রাশির যে সবসময় সেই গল্প শুনতে ভালো লাগতো তা মোটেও নয় । যে ছোট থেকে কোয়েড স্কুল কলেজে পড়ে ছেলেদের সাথে পাল্লা দিয়ে বড় হয়েছে তার কাছে এসব গল্প বড় অবাস্তব লাগতো ।ঠাকুমা কে সেও বড় ভালোবাসে বলে হুঁ হাঁ করে শুনে যেতো । বড় হবার পর ঠাকুমার গল্প করা থেকে রাশি অনুমান করেছিলো দাদু কে নিয়ে সাংসারিক জীবনে বেশ সে  অসুখী ছিলো । কি যেন এক অতৃপ্তি তার থেকে গেছে । অনেক সময় জানতে চাইলে বলতো –নতুন জন্মে সব ঠিক হয়ে যাবে ... 

জিনস টপ ছেড়ে হালকা শ্যামলা রঙের চেহারার রাশি আজ কলমকারী প্রিন্টের  কাটস্লিভ ব্লাউজ সাথে লেমন ইয়ালো সিফন সাড়ি নাভির ইষৎ নীচে পরে   আনুষাঙ্গিক সাজসজ্জা করে আয়নায় নিজেই নিজের দিকে তাকিয়ে অনুচ্চারিত বাঃ শব্দ করলো ।বাড়ি থেকে বেরিয়ে একগোছা ফুলের তোড়া নিয়ে প্রথমে ঠাকুমার সাথে দেখা করতে এলো । রাশিকে দেখে শীর্ণ চেহারার বৃদ্ধার মুখ উজ্জ্বল হাসিতে   ভরে উঠলো ।ধীরে সুস্থে তাকে বিছানায় উঠিয়ে বসালো রাশি । কোটারাগত চোখে বিদ্যুৎ ঝিলিক । রাশি দুহাতে দিয়ে জড়িয়ে ধরলো ঠাকুমাকে । বাহুমুক্ত হয়ে চঞ্চল চোখে বৃদ্ধা তাকালো রাশির দিকে । ক্ষীণ কন্ঠে একটা চুম্বনের  আবদার সে রাখলো নাতনির কাছে । এ এমন কী কথা । এর আগেও রাশি ঠাকুমার গালে বহুবার চুমু খেয়েছে ।কিন্তু কিছু বোঝার আগেই অসুস্থ বৃদ্ধা রাশিকে জড়িয়ে ধরে নিজের দিকে টেনে এনে ক্ষুধার্ত এক চুম্বন একে দিলো রাশির  ঠোঁটে । কিংকর্তব্যবিমূঢ রাশি অনুভব করলো বৃদ্ধার শীর্ণ হাত তার উদ্ধত স্তনযুগলের সাথে খেলা করতে চাইছে ।কিন্তু অসময়ের সময় বাধা হয়ে দাঁড়ালো । রাশি বিস্মিত গলায় কিছু বলার আগে বৃদ্ধা ‘নতুন জন্ম’ বলে নাতনির কোলে ঢলে পড়লো ।
ঘড়ির কাঁটা পাঁচটা থেকে সাড়ে পাঁচটা । সিরি ফোর্ট চত্বর থেকে রাশির ব্যাগে ক্রমাগত তখন আকৃতির ফোন বেজে চলেছে ।                                 


No comments:

Post a Comment

Facebook Comments