html

Tuesday, April 10, 2018

মণিরত্ন মুখোপাধ্যায়

লেজ সংক্রান্ত আরও কিছু

মণিরত্ন মুখোপাধ্যায়


এই কিছুদিন আগে লেজ সংক্রান্ত মিনির প্রস্নাবলী শুনিয়েছি আপনাদের। কিন্তু সেখানেই আমার অনুসন্ধিৎসার শেষ হয়ে যায়নি। কথাটা হল মিনির প্রশ্ন ছিল – আমাদের লেজ নেই কেন? এখন সেটা দাঁড়িয়েছে – আমরা লেজ নাড়িনা কেন? উত্তরটা খুব সোজা, নেই তাই নাড়িনা, থাকলে নিশ্চয় নাড়তাম। মিনিকে বোঝানো হয়েছিল আমাদেরও লেজ আছে, শিড়দাঁড়ার শেষে চারটি লেজ সংক্রান্ত ছোটছোট হাড় আছে। এবং তারা একে অপরের সঙ্গে এত কষে জুড়ে আছে যে নড়ানর উপায় নেই। 
কুকুর প্রভুভক্ত জীব, প্রভুর দেখা পেলে সে আনন্দে লেজ নাড়ে। বেড়ালের লেজ আছে, এবং বেড়াল বাচ্চার লেজ নিয়ে ঘুরে ঘুরে খেলা করার কায়দার দৃশ্যের সঙ্গে আমরা সবাই যথেষ্ট পরিচিত। তারপর বড়বড় বাঁদরের বড়বড় লেজের কথাও আমরা জানি। এখন যেহেতু আমাদের মানুষদের লেজ অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত, এবং সলিড, তাই আমরা সেটা নিয়ে না পারি খেলা করতে, না পারি বেশি আনন্দ হলে নেড়ে নেড়ে প্রকাশ করতে। কিন্তু আমার দাদার বন্ধু গোবিন্দ মহাপাত্র তাঁর  নাগপুরের বাড়িতে বউয়ের ল্যাজ নড়ানোর কথা শোনানোতে আমি চমকে গিয়েছিলাম। আপনাদেরও চমকাতে বলছি, কিন্তু একটু সাবধানে। 
গোবিন্দদা দাদার বন্ধু, এবং কলকাতার মানুষ। পরিষ্কার বাঙালী, এবং একটু বেশি বেশি বাঙালী, তিনপুরুষের বাস কলকাতায়। তাঁর বউটি নেহাত বাঙালি, নাম অঞ্জলি কর্মকার, বাপের নাম সিদ্ধেশ্বর কর্মকার। এই নেহাত বাঙালি আর বেশি বাঙালির বিয়ের পর সাতবছর কেটে গেছে, তাঁরা চলে গেছেন নাগপুরে, চাকরিতে ট্রান্সফার হয়ে। আমি দিল্লী থেকে সারারাত ট্রেনে এসে ভোরবেলা নেমেছি নাগপুর, এবং গোবিন্দদার বাড়িতে উঠেছি দিন তিন থাকব বলে। এদিকে আমার একটা কাজ পড়ল বলে গোবিন্দদার বাড়িতে আসার সুযোগ হল। গোবিন্দদা খুব খুশি, বউদি খুব খুশি, দুটো মেয়েও খুব খুশি উপযুক্ত উপহার পেয়ে। গোবিন্দদা বলল,
-- চল মণি, চা খেয়ে চট্ করে বাজার থেকে ঘুরে আসি। তুই আসছিস বলে আজ তোর বউদি অনেক কিছু কেনার জন্যে একটা বিশাল লিষ্ট ধরিয়ে দিয়েছে। 
অতএব আমরা দুজনে লিষ্ট মিলিয়ে বাজার টাজার করে ফিরলাম। আলুগুলো একটু ছোট সাইজের হয়েছে দেখে বউদি বললেন,
-- বাজারে এর চেয়ে ছোট আলু ছিলনা?
উত্তর হল, -- বাড়িতে বসে বসে লেজ নাড়ছ, বাজার তো কোনদিন করলে না? আজকাল ওর চেয়ে বড় আলু পাওয়া যায় না। শীতের সময় বড় আলু উঠবে বাজারে। 
আমি হতবাক। বাড়িতে বসে বসে লেজ নাড়ছ কথাটার মানে কি হল? কিন্তু বউদির ওসব শোনা বোধহয় অভ্যেস আছে। তিনি বললেন,
-- কবে আর বাজারে বড় আলু পেয়েছ তুমি? 
    কথাটা গোবিন্দদার কানে যায়নি, কেননা তিনি অফিস যাবেন, সুতরাং তাড়াতাড়ি বাথরুমে ঢুকে পড়েছেন। আমি স্থির হয়ে বসে রইলাম, কেননা বউদি বলেছেন -- বসো মণি ঠাকুরপো। ভাল করে চা করছি, তুমি আর আমি জুত করে খাব। অতএব বসে আছি জুত করে আর একবার চা খাব বলে। মাথায় পোকা ঘুরছে, বউদির লেজ নাড়ার প্রশ্নটা নিয়ে। আমি আমার বেকুবত্ব সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। তবু ওই রকমের ইডিয়াম শুনতে অভ্যস্ত নই বলে একটু মুস্কিলে পড়লাম। এখন বউদিকে তো বলা যায় না – আপনি কি লেজ নাড়তে পারেন? 
অনেকে কান নড়িয়ে দেখাতে পারেন। অনেকে জিভটা ছুঁচলো করে নাকের ভেতর গরুর মত ঢুকিয়ে দেখাতে পারেন। একজন তো আবার চোখ এত বড় করে বের করে আনতে পারেন কোঠর থেকে, যে দেখে ভয় লেগে যাবে। তেমনি কেউ কেউ হয়ত লেজ নাড়তে পারেন, কিন্তু হয়ত দেখাতে পারবেন না। কারণ লেজ দেখানোটা মানুষের পক্ষে মোটামুটি লজ্জার বিষয় হবে বলেই আমার ধারণা। তবু অনেক ভেবে চিন্তে রেখে ঢেকে বউদিকে চায়ের সঙ্গে প্রশ্নটা করলাম,
-- গোবিন্দদা আপনাকে লেজ নড়ানো নিয়ে কি বলল?
-- আরে ধুর, ওর তো ওইরকমের হ্যাঁটা করে কথা বলা অভ্যেস। ওসব কথা ধরতে নেই, ধরলে ঝগড়া হয়ে যাবে। এখন আমার ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছে না। যখন ইচ্ছে করবে তখন উপযুক্ত জবাব পাবে। 
বউদির এখন অনেক কাজ। রান্নাটা সেরে নেবেন, মেয়েদুটো ইস্কুল যাবে, তাদের বাপ যাবে অফিস। টপ করে উঠে চলে গেল রান্নাঘরে। আমার কাপটাও নিয়ে গেছে। এখন আমার অবসর হয়েছে একটা নয় দুটি প্রশ্ন নিয়ে ভাববার। একটা তো আপনারা শুনেছেন, লেজ নড়ানো যায় কিনা তার ফয়সলা করা হয়নি এখনো। তার সঙ্গে যোগ হল বউদির ঝগড়া করার ইচ্ছে নিয়ে। মানুষে ইচ্ছে করে ঝগড়া করতে পারে এটা আমার কাছে একটা নতুন তথ্য। তবে ঘরে বসে লেজ নাড়ার অভিযোগের উত্তরে বউদি কেমন করে ঝগড়ার জন্যে উপযুক্ত করে একটা জবাব দেন সেটা আমার দেখা হয়নি। 


No comments:

Post a Comment

Facebook Comments