html

Tuesday, April 10, 2018

রীতা বিশ্বাস পাণ্ডে

নেতাজীর কিছু কথা

রীতা বিশ্বাস পাণ্ডে


১৮৯৭ সালের ২৩শে জানুয়ারি নেতাজীর জন্ম হয়।পি বসু আর মাতা প্রভাবতী দেবীর বড় আদরের নবম সন্তান। সুভাষ চন্দ্র বসু একটি ধনী পরিবারে জন্ম নেন। তার কৈশোর কালে তাঁরা তাঁর জন্মস্থান কটক ছেড়ে কোলকাতাই বসতি স্থাপন করেন। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করার পর তিনি ভারতে ফিরে আসেন । কিন্তু পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ সরকারের চাকরী  করাটা তাঁর মনপুত হল না।তার চাইতে তিনি  ভারতকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করবার জন্যে নিজেকে উৎসর্গ করাটা মনস্থ করলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম নেতা কমই দেখতে পাওয়া যায়।

১৯২০ থেকে ১৯৩০ অবধি তিনি ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের তরুণদের নেতা ছিলেন। ১৯৩৮-১৯৩৯ পর্যন্ত তিনি কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন। মোহন দাস করম চাঁদ গান্ধীর সাথে মতপার্থক্যের কারণে তাঁকে কংগ্রেস  ছাড়তে হয়। কিন্তু যে একবার দেশ সেবার ব্রতে নিজেকে উৎসর্গ করেছে তাকে কি কোন বাঁধা আটকাতে পারে ? তাই তিনি আলাদা ভাবে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে নিজের সংঘর্ষ চালিয়ে যান । ব্রিটিশ রাজের শত্রু ছিল তখন জার্মান আর সোভিয়েত রাশিয়া। নেতাজী মনস্থির করলেন যে দেশে থেকে মতপার্থক্যের কারণে ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে তিনি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে যুদ্ধ করতে পারবেন না। তাই তিনি জার্মানে যাওয়া মনস্থির করলেন। এবং চরম রাষ্ট্র বাদী হওয়ার ফলে ১৯৪০ সালে তিনি দেশত্যাগ করেন একটি মহৎ উদ্দেশ্যকে কার্যকরী করবার উদ্দেশ্যে।অনেকদিন সেখানে থেকে তিনি রাশিয়া ,অস্ট্রিয়া, জার্মানি এবং ইটালির সমর্থন প্রাপ্ত করেন। ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার অভিপ্রায়ে যখন তিনি দেশে ফিরে আসেন তখন   ব্রিটিশ সরকার তাঁর অভিযানে ভয় পেয়ে তাঁকে গৃহ বন্ধী করে। তারপর দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হল।  
১৯৪১ নেতাজী পালিয়ে গেলেন। ইটালিয়ান পাসপোর্টের সাহায্যে তিনি দেশত্যাগ করেন আর জার্মানিতে পৌঁছে যান।ইটালিয়ান পাসপোর্টের সাহায্যে তিনি জার্মানিতে পালিয়ে গেলেন। সেই সময় নেতাজীর  হয় জার্মানি নতুবা ইটালি অথবা জাপানে থাকবার কথা।এরা মিত্র রাষ্ট্রের শত্রু ছিল। আর শত্রুর শত্রু বন্ধু হয়।তাই নেতাজী এদের সাথে বন্ধুত্ব করেছিলেন।১৫ অগাস্ট ১৯৪৫ এম্পেরর হিরো হিতো রেডিও তে এনাউন্স করলেন যে জাপান আত্ম সমর্পণ করেছে।দ্বিতীয় দিনই সুভাষ চন্দ্র বসু আই এন এ হেড কোয়ার্টার সিঙ্গাপুর ত্যাগ করে চলে গেলেন। সাথে কয়েকজন বিশ্বস্ত অফিসারকে নিলেন শুধু। জাপানী প্লেন আকাশে উড়ল। সেই প্লেনে নেতাজী ছিলেন। তাঁর সঙ্গে  তৎকালীন জাপানী  লেফটেন্যান্ট জেনারেল সুনামাসা সেইদেই  ছিলেন। তাঁরা মাঞ্চুরিয়াতে গেলেন। যা  পরে  রাশিয়ার অধিকৃত হয়। একদিন পর তাইপেই যেতে প্লেন দুর্ঘটনা গ্রস্ত হয়। দুজনেই মারা যান ।সারা পৃথিবী এটাই  জানতে পারলো। কিন্তু এই ঘটনাটা এখন ও একটি রহস্য হয়ে আছে । 
  
যা বলছিলাম,দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শেষ হল। জাপান সারেন্ডার করলো। মিত্র রাষ্ট্র জিতে গেল। জাপানের আত্মসমর্পণের  আগে একটি সাবমেরিনকে দেখা গেল। সিক্রেট এজেন্সি জানাল তাতে সুভাষ চন্দ্র বসু ছিলেন। আর তিনি রাশিয়ার বন্দর  ব্লাডিভস্তকে যাচ্ছেন।  বারো দিন আগে সবাই জেনেছিল যে সুভাষ মারা গেছেন প্লেন দুর্ঘটনাতে। সাবমেরিন প্রচুর সোনা মণি মাণিক্য দামী মসলিন নিয়ে সাগর  পারে যাচ্ছিল। যা মালেয় রাজ্যে সংগ্রহ করা হয়েছিল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সামগ্রী কেনার জন্য। মহা মূল্যবান এই ধনরাশি আজকের যুগে কয়েক কোটি টাকার হবে যার বেশীরভাগ খুঁজে পাওয়া যায়নি অথবা চুরি হয়ে গিয়েছে। কোথায় গেল নেতাজীর এই বিশাল ধনরাশি? কেউ বলতে পারে না।

ইন্দো ফ্রান্স ঐতিহাসিকবিদ জে বি পি মোরে বলেন, নেতাজীর অবশেষের অনেক খোঁজ করা হয়েছিলো কিন্তু পাওয়া যায়নি।  সাইগণে  উনি নেতাজীর খুব কাছের মানুষ ছিলেন। ১৮ আগস্টে নেতাজী তাঁর বাড়ীতে উঠেন। কিন্তু তার পর তাঁকে আর দেখা যায়নি।তারমানে ১৫ আগস্টের পর ও নেতাজী বেঁচে ছিলেন। কোথায় গেলেন তিনি? তিনি যখন ১৮ আগস্টে সাইগনে ছিলেন তবে অনেক দূরে তাইপেই এ ১৫ আগস্টে তিনি প্লেন ক্রাসে কি ভাবে মারা যান?কোন অফিশিয়াল রেকর্ড এটা বলে না যে ১৯৪৫ তে তাইপেই এ কোন মৃতদেহ জ্বালানো অথবা কবর দেওয়া হয়েছিল। তবে কোথায় গেলেন তিনি?২২ অগাস্টে একটি মৃতদেহকে কবর দেওয়া হয় সেটি ছিল চিউ অকুরা বলে এক জাপানী সৈন্যের। 
যদি নেতাজী আর তাঁর সঙ্গী কাসিতাই-এর   মৃত্যু ১৯৪৫-এ হয়ে থাকে তবে কোন সামরিক মৃত্যু সম্মান তাঁদের কেন দেওয়া হয়নি সে সময়? কেন? ব্রিটিশ শাসন নেতাজীর মৃত্যু স্বীকার করে নেয়। কিন্তু ব্রিটিশ আর ফ্রান্স ইন্টেলিজেন্সরা নেতাজীর খোঁজ করা ছাড়েন নি। ১৯৪৬-এর প্রথম দিকে নেতাজী রাশিয়াতে আছেন এই ধারণা নিয়ে লোকেরা যখন প্রশ্নবাণে নিজেদের বিদ্ধ করছিল ঠিক তখন একদিন মস্কো রেডিওতে নেতাজীর গলা ভেসে এলো। “All Via Subhash   Chandra Bose”। এই রেডিও ভাষণটি ভারতের ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিরা রেকর্ড করছিলেন। কিন্তু কোন প্রমাণ সাপেক্ষ তথ্য যোগার করা যায়নি যে সেটা নেতাজীরই কণ্ঠস্বর ছিল।

এসব ঘটনা আমরা কম বেশী সকলেই জানি। কিন্তু যেটা জানি না সেটা হচ্ছে স্বাধীনতা সংগ্রামে ব্যবহার করার জন্যে নেতাজী যে বিশাল ধনরাশি একত্রিত করেছিলেন সেগুলো কোথায় গেলো? এই বিষয়ে ইনস্পেক্টর জি সি স্যান্যাল হয়তো কিছু আলোকপাত করতে পারতেন। কিন্তু একদিন জি সি স্যান্যাল নিজের ঘরে ফিরছিলেন। অজ্ঞাত কারণে স্যান্যাল মৃত্যু বরন করেন। ডিউটিতে থাকাকালীন কে বা কারা তাকে হত্যা করে। তার ঘরের সামনেই তাকে  হত্যা করা হয়। আজ অবধি জানা যায়নি তারা কারা? হয়তো নেতাজী সুভাষ সম্বন্ধে তার কাছে অনেক তথ্য ছিল।  

অক্টোবর ১৯৯৬ ভারতীয় প্রতিনিধিরা রাশিয়ার মস্কোতে  প্রেসিডেন্ট হোটেলে থাকতে এসেছেন।মিস্টার জয়ন্ত  রয় আর চিত্ত বসু সেই ভারতীয় প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন। চিত্ত বসু  ফরওয়ার্ড ব্লকের মেম্বার ছিলেন। প্রাক্তন সামরিক অধিকারী মেজর জেনারেল অ্যালেকজান্ডার কলাক্সিকো নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের কিছু তৎকালীন  ছবি আর ডকুমেন্ট চিত্ত বসুকে দেওয়ার কথা ছিল যেটা প্রমাণ করত যে ১৯৪৫ পর নেতাজী সোভিয়েত ইউনিয়নে ছিলেন। চিত্ত বসু সেগুলো নিয়ে দেশে ফিরে এলেন। চিত্ত বসুর মৃতদেহ পাওয়া গেল মধুপুরের  রেল স্টেশনে দানাপুর এক্সপ্রেসে। তারপর আর সেই ছবি বা ডকুমেন্ট পাওয়া যায়নি অথবা পাওয়ার কোন চেষ্টা করা হয়নি। কোন খোঁজ সমিতি ও গঠন করা হয়নি তার জন্যে। কিন্তু এটা শুধু একটা মৃত্যুর কাহানী নয় যেটা নেতাজীর সাথে জড়িত ছিল। 

কোলকাতা পুলিশ ইন্সপেক্টর গোরাচাঁদ স্যান্যাল মৃত্যুর খবরটা ছাপা হয় বাংলা পত্রিকা যুগান্তরে। পত্রিকাতে ছাপা হয় স্যান্যাল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে  ব্রিটিশ অধিকৃত ভারতীয় সৈন্য বাহিনীতে ছিলেন। সেই সময় তিনি ব্রিটিশ অধিকৃত সিঙ্গাপুরে একটি জেলে বহাল ছিলেন যেখানে  জাপানী যুদ্ধ বন্ধী সৈন্যদের রাখা হতো। কাজী হুক বলে এক যুদ্ধ বন্ধীর কাছে তিনি শুনেছিলেন যে যখন সুভাষ চন্দ্র বসু সিঙ্গাপুরে এসেছিলেন তখন   তাঁকে একটি নেতার সমান স্বাগত জানানো হয়।এধরণের কাহিনী তিনি শুনতে পান জাপানী যুদ্ধ বন্ধীদের কাছে। তবে কি স্যান্যাল কাছে আরও অনেক তথ্য ছিল। কে জানে?
রেডিওতে নেতাজীর আওয়াজ, চিত্ত বসু আর স্যান্যাল মৃত্যুর কেস গুলো এখন ও কোন মীমাংসার পর্যায়ে এসে দাঁড়ায়নি।    

১৯৩০এ নেতাজীকে ব্রিটিশ সরকার বন্ধী করে ইউরোপে পাঠিয়ে দেয়। নেতাজী সেখানে জার্মানির সাথে বন্ধুত্ব করেন এবং জানতে পারেন যে জার্মানির কাছে সাবমেরিন ছিল।যেটা ওরা ভারতীয় মহাসাগরে চলাচল  করাতো। জার্মানির দুটো উদ্দেশ্য ছিল । একটা হচ্ছে যুদ্ধ করা মিত্র  রাষ্ট্রের  বাহিনীর জাহাজের বিরুদ্ধে আর দ্বিতীয় হচ্ছে জিনিষপত্র আমদানি করা ইউরোপ থেকে সুদূর পূর্বের দেশগুলিতে। জাহাজে জিনিষপত্র উঠা নামা করার জন্যে বিশাল ক্রেন ছিল।১৯৪৩ সালে জার্মানি নেতাজীর সাথে মিলে প্ল্যান করেন সেটা হচ্ছে এই সাবমেরিনের সাহায্যে  পূর্বের দেশগুলিকে আর্থিক সাহায্য পাঠানো আর সুভাষ চন্দ্রের আজাদ হিন্দ বাহিনীর  সাথে মিলে মিত্র রাষ্ট্রের বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা। এই খবর পেয়ে মালেয় দ্বীপে প্রবাসী ভারতীয়দের  জনসমুদ্র উচ্ছলে পরেছিল। তারা একটি র‍্যালি বার করেন এই সময়। ৭ টি ইটালিয়ান মালবাহী জাহাজ আর  
এমন কি জার্মান দেশ যখন সারেন্ডার করে দিল তাঁর পর ও এরা তাঁদের কাজকে না থামিয়ে আরও তৎপরতার সাথে তা চালিয়ে যান ।এই জাহাজে নেতাজীর সোনা ভর্তি মাল ও ছিল। নেতাজীকে সাদর অভ্যর্থনা জানানো হল সিঙ্গাপুরে। দুই দিন পর নেতাজী আজাদ হিন্দ ফৌজের মুখ্য সেনাপতি হলেন। আজাদ হিন্দ ফৌজে ভারতীয় সৈনিকরা ও ছিলেন যারা ভারতকে ব্রিটিশ শাসকদের হাত থেকে স্বাধীন করাতে চাইছিলেন। জাপান এই ফৌজকে সমর্থন করছিল। ১৯৪৩ নেতাজীকে দেখা গেল বেঙ্কার কাইজ শিবু চাওয়ার  সাথে। যিনি পরবর্তীকালে ব্যাঙ্ক অফ জাপানের অধ্যক্ষ বনেছিলেন।কেন নেতাজী উনার সাথে দেখা করেছিলেন।আজাদ হিন্দ বাহিনীতে তখন ৪০ হাজার সৈন্য ছিল যাদের থাকা খাওয়া আর অস্ত্র শস্ত্র প্রদান করার জন্যে বিপুল ধন রাশির দরকার ছিল। যা নেতাজী মালেই থেকে সংগ্রহ করেছিলেন। সেগুলি স্থানান্তরিত করার কথা কি নেতাজী কাইজু শিবু চাওয়া কে বলেছিলেন?  জাপানিজ রাজকুমার চিচিবু ১৫০  কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চিকতে একটি দল গঠন করেন গুপ্ত ভাবে । সেখানে যুদ্ধ কালীন  গুপ্ত কাজ কর্ম হত। সেখানে একটি ওয়ের হাউস ছিল গুপ্ত ধন সম্পত্তি যেখানে আমদানি রপ্তানি করা হতো যুদ্ধের সামগ্রী কেনা কাটার জন্যে।  জাপানিজ  আর আজাদ হিন্দ বাহিনীর গুপ্তচররা একসাথে কাজ কর্ম করতো।  তবে কি ঐ বিশাল স্বর্ণ ভাণ্ডার জাপানী সৈন্য আর আজাদ হিন্দ ফৌজ মিলে যুদ্ধের তৈয়ারির খর্চা করবার জন্য পরিকল্পনা করছিলেন?  ব্রিটিশ সৈন্যদের ধ্বংস করাই কি এঁদের উদ্দেশ্য ছিল। সাইগন একটি ছোট শহর। যেখানে জাপানিজ আর ভারতীয়রা মিলে মিশে থাকতো। সবাই যে যা পারে নিজের গয়না  জমানো সোনা সব আজাদ হিন্দ ফৌজকে ভারতকে স্বাধীন করার জন্যে দিয়েছিল।১৯৪৩র অক্টোবর মাসে নেতাজী এই দলের কার্যভার নিজ হাতে নেন ভারতকে ব্রিটিশদের হাত থেকে আজাদি দেওয়ার জন্যে।আজাদ হিন্দ ফৌজের কাছে প্রায় ১৫৫ কিলোগ্রাম সোনা ছিল। আজকে  ১৫৫ কিলোগ্রাম সোনার দাম হবে  ৬.২ মিলিয়ন ডলার।নেতাজীর এই বিশাল ধনরাশির হিসাব রাখতেন তাঁর বিশিষ্ট অফিসার মিস্টার  চ্যাটার্জি ।যুদ্ধের পর  জাপানীদের খুব অত্যচার করা হয় এই ধনের হদিশ পাবার জন্যে।২৪ অগাস্ট ১৯৪৫ চ্যাটার্জি  সাইগন থেকে হেনয়ে চলে যান একটি জাপানী উড়োজাহাজ করে।আজাদ হিন্দ ফৌজের অফিসাররা ও তাঁর সঙ্গে ছিলেন।  জাপানী উড়োজাহাজ চীনের জন্যে উড়ান ভরল। এর পর জাপানীরা ও আত্মসমর্পণ করে। ১৯৪৫এর নভেম্বর মাসে সাইগনে ব্রিটিশ গুপ্তচর  জানালেন একটি ব্যাঙ্ক ড্রাফটের রিসিপ্ট পাওয়া গেছে চ্যাটার্জির নামে ।যার  আজকের সময়ে মূল্য হবে ২.১৭ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার।  এই  খবরটি  ব্রিটিশদের বাধ্য করে চ্যাটার্জিকে ধরার জন্যে।চ্যাটার্জিকে  হেনয়ে ধরা হয় ২২ ডিসেম্বর ১৯৪৫এ।  ব্রিটিশ ভারতীয় সৈন্যের লেফটেন্যান্ট চীফ আবিষ্কার করলেন টাকার হেরফের হয়েছে ফ্রেঞ্চ ইন্দো চীনা আর ফ্রেঞ্চ ইন্দোনেশিয়াতে যার মূল্য 3.৮২ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার। এই বিশাল ধন রাশি জোগাড় করাটা কি  স্থানীয় ভারতীয়দের  ছাড়া সম্ভব হয়েছিল?আইএনের কাছে ২৬২ কিলোগ্রাম ২৩ ক্যারেটের  সোনার বিস্কিট ছিল। ২৫৬ বার্মিজ রুবি ছিল ।আজকের হিসাবে যার মূল্যায়ন হবে ৪ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার।  সোনা  আর রুপার অঢেল গহনা ছিল। ১ মিলিয়ন ফ্রেঞ্চ ইন্দো চীনা ধন সম্পত্তি যার আজকের মূল্য হবে ১.২৫ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার। পুরো ধনরাশি যদি একসাথে মুল্যায়ন করা হয় তবে তার মূল্য আজকের সময়ে  ২০ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার হবে। ১৯৪৬-এ  ব্রিটিশ সরকারের মুখপাত্র বলেন আই আই এল এবং আই আই এনের ধনরাশি সিঙ্গাপুরে একত্রিত করা হয় তা মুল্যায়ন করবার জন্যে। ব্যাপারটা ১৯৫২ সালের আগে অবধি নির্ধারিত করা যাইনি। আরেকটি ফাইল নাম্বার ৪০৯০/৩৫ অনুসারে ঐ বিশাল ধনরাশি কোথায়? যুক্ত ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ কেন্দ্র ভারতে স্থাপিত হয়। যার মুখ্য অধিকর্তা ছিলেন মেজর হুই তয়। যিনি ‘বোস হান্টার’ নামে বিখ্যাত ছিলেন। তয় আই এন এর কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে পর সবাই দক্ষিণ পূর্ব  এশিয়াতে পালিয়ে যান আর জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব সেখানে থেমে যায়। ১৯৪৭ সালের ৫ই অগাস্টে অস্ট্রেলিয়ার ডেইলি নিউজ পেপার ওয়ার এট ডেইলি নিউজ লেখে যে বিশাল আই এন এ ধনরাশি জাপানীদের হস্তান্তরিত করা হয় সেপ্টেম্বর ১৯৪৫  যার মূল্য ছিল ১০ বিলিয়ন ইয়েন। যার তৎকালীন  মূল্য হবে ৬৬৭ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার। এই ধনরাশির কোন হিসাব কেন পাওয়া যায়নি? কোথায় গেল এই বিশাল ধনরাশি? আজকের হিসাবে এর মূল্য হবে ৯ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার।   

১৯৫২ সালে জাপানী সরকার দুটো সুটকেস হস্তান্তরিত করলেন ভারতের সরকারকে যার ওজন ছিল ১৩.৬ কিলোগ্রাম। এগুলি নেতাজীর প্লেন দুর্ঘটনার পর ঘটনা স্থল থেকে পাওয়া জিনিষে ভর্তি ছিল।এগুলি হস্তান্তরিত করতে জাপানী সরকারের ৭ বছর সময় লেগেছিল। এটাতে জাপান আর ভারতের শান্তি সন্ধির কাগজ পত্র ও   ছিল। এই সন্ধি অনুসারে ভারতকে জাপানের প্রতি তার যুদ্ধকালীন সমস্ত ক্লেইম ছেড়ে দিতে হয়। সুটকেসে   কি আই এন এর কোন ধনরাশি ছিল না? জুসেই তাজিমা বলেন টোকিও তে তারা বিশাল মূল্যবান পাথর সব ভারতীয় দূতাবাসকে হস্তান্তরিত করেছিলেন।১৯৫৮ থেকে ১৯৬১ পর্যন্ত এরকম তিনবার করা হয়েছে। এই মহামূল্যবান পাথরগুলি নেতাজীর ধনরাশির অংশ ছিল।এর মধ্যে ছিল একটি  ১৮৪০০ ক্যারাটের ওরিয়েন্টেল  এমারেলড আজকে যার মূল্য হবে ৬ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার!  দ্বিতীয় বস্তুটি ছিল একটি বুদ্ধ মূর্তির মস্তক যার ওজন ছিল ১৭৮৮০ কেরাট। আজকে যেটার মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভবপর নয়। এগুলির ছবি টোকিওতে  ভারতীয় দূতাবাসে আছে।আরেকটি মূল্যবান ধন হচ্ছে একটি ১৭০০ বছর পুড়নো  ১ ফুট উঁচু বুদ্ধ মূর্তি।যেটা পূর্বের বিখ্যাত পান্না পাথর দিয়ে সজ্জিত ছিল। এটার ওজন ১৪৭০০ কেরাট। ভারতীয় কূটনীতিজ্ঞদের হিসাবে এর মূল্য হবে ১.৫ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার।যার এখনকার মূল্য হবে ১২.১৫ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার। 

জুলাই ১৯৪৩ ইটালি আত্মসমর্পণ করলো। ইটালিয়ান  সাবমেরিনগুলো জার্মান মনসুন দলের সাথে যোগদান  করল। ৯ই মে ১৯৪৫ জার্মানি আত্মসমর্পণ করলো। মনসুন দলের সাবমেরিনগুলি জাপানী অধিকারীদের অধীনে চলতে থাকলো। নেতাজী এই অধিকারীদের চিনতেন হয়তো। তিনি সাইগন থেকে সিঙ্গাপুরে চলে গেলেন যেটা তিন ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত ছিল।  তারপর যা হয়েছে ইনস্পেক্টর স্যান্যালের মতে সিঙ্গাপুর থেকে নেতাজী সাবমেরিনে চড়ে সোভিয়েত দেশে পারি দেন ১৮ অগাস্ট ১৯৪৫-এ। সেখানকার সরকার নেতাজীকে চিনতে পারেন। ব্লাদিভস্তকে তাঁকে দেখা গেল সিঙ্গাপুর ছাড়ার ১২ দিন পর । এটা কি ভাবে সম্ভব হল? সোভিয়েত অধিকৃত ভিয়েনাতে উনাকে দেখা যায়  উনার বৌ আর কন্যার সাথে। আই এন এর ধন সম্পত্তি কি উনার সাথে ছিল স্বাধীনতার যুদ্ধকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্যে? ৩০শে অগাস্ট ১৯৪৫ ইটালিয়ান লঙ রেইন সাবমেরিন ইউ আই ডি ২৫ মনসুন দলের দ্বারা পরিচালিত ছিল তারা দাবি করল যে তারা একটি ইউয়াইদি ২৫ সোভিয়েত যুদ্ধ প্লেনকে সুট করে ব্লাদিভস্তকের সামনে সমুদ্রতে ফেলেছে। কেন সেই প্লেনটিকেই গুলি করে নীচে ফেলা হল যখন ইটালি, জাপান আর জার্মান আত্মসমর্পণ করে ফেলেছিল? কোন নথিপত্র পাওয়া যায় নি কেন ঐ সোভিয়েত মালবাহী  প্লেনটিতে? অনেক প্রশ্নের উত্তর আজ অবধি পাওয়া যায়নি। আজও নেতাজীর ধনরাশি নথি পত্রের  সঠিক সন্ধান কেউ দিতে পারেননি।                 

No comments:

Post a Comment

Facebook Comments