html

Friday, April 13, 2018

দিলীপ ফৌজদার

বিকীরণ

দিলীপ ফৌজদার



সময় পেরিয়ে যাওয়ার কথা বলতে নদীর কথা তখন পেরিয়ে যেতে যেতে হেঁটে পেরোনর কাঁটা পায়ে যে বিঁধবে এ সম্বিৎ ভাবনার স্রোতকে ছাপায় না, উশকায় পায়ের তলার হাঁটাপথ যেটায় এখন আর স্রোতের বাধা নেই, এটাকে এখনো নদীই বলবো, এটা স্বভাব, যা মলেও যায় না, এই ধরে রাখা নাম যা পড়ে থাকা বা বিস্মৃত, কিংবা হতে পারে উপেক্ষিতও তবুও কিছু গড়ায়, তবু এই নির্জলা নদীরে নদীই কই আপাতত



মেনে নিলে নকশা ঠিকঠাক মেলে - সমস্ত ভূগোলচিহ্ন, যাবতীয়, সকলেই যে যেমন সে তেমন আপন আপন জায়গায় বসে ছেলেবেলাকার ক্লাসরুমে - সে কালটা কদিন আগের হলেও সুদূর , ঝাপসা - এটা কুয়াশা, ধোঁয়াসা বা ধুঁয়া সা অথবা মস্তিষ্কবিকৃতিজনিত না ভেবে বরং এগিয়ে যাই এই ভাবনায় যে কিছু হারালে বিনিময়ে কিছু আসে  সেটা বিনিময় না ভাবলেই পুরোণো জগতটা ভেঙে যায় নতুন আরেকটা জগৎ আসে জায়গাটার দখল নিতে, শরিকেরা আপন আপন ধর্ম আঁকড়ে ত্বরায়, অধিকারবোধে তুমুল, তুখোড়, 



বিকৃতিরা নাচের নকশা বদলে  গড়ার ঝোঁকে মাতোয়ারা, বুঁদ, এটায় যাঁরা শিব গডতে বাঁদর গড়ার কথা তুলে সোচ্চার হন বক্রোক্তিতে বা উপেক্ষায় তাঁদের অজান্তেই সময় কখন ঘুরে দাঁড়ায়,  সেই তাঁদেরই একেবারে মুখোমুখি, দৃষ্টিকটু অঙ্গভঙ্গি করে, মানুষ জানেনা সুন্দরের জায়গাটার এত বিস্তার সুরূপ পেরিয়ে কুরূপের প্রসারিত মালভূমিতে আরো কত গহন বন সেগুলোরও কোনটা ক্ষয়া কোনটা ভাঙা কোনটায় আরোপিত বিকৃতি তো কোথাও অতি চাইএর দারিদ্র্য, আবার কোনখানে অতি উপেক্ষার দৈন্য



আমরা এখনো নদীকে নদী বলি বনকে বন পাহাড়কে  পাহাড় কোন একটা দেশে গেছি যার সর্বোচ্চ পাহাড় একশ আশি মিটারের তার নাম আকাশপর্বত তার চূড়া পর্যন্ত পৌঁছে গেছে পীচরাস্তা, লোকেরা ওটাকেই পর্বত জানে হিমালয় সেখানে কল্পনায় সাতকাহন আর সেখানে পৌঁছে পাহাড় কাকে বলে একথাটাও মাথায় ঘোরাফেরা করে কিন্তু এটাও সেই ছেলেবেলাতেই  দেখা মুখোমুখি  দাঁডানো খাড়া উত্তুঙ্গ পাহাড়, পথ চলার অভিকর্ষ তাগিদে পায়ে পায়ে মিলিয়ে যায় সব দুর্ধর্ষ অজানা, অহংকারী অনড়, উচ্চতা, তখনও পায়ের তলায় পথ সবকিছুকে ধরে রয়েছে ঠিক যেমন ছিল তেমনিই



তখন বনের ঝোপঝাড়, শালপিয়ালমহুয়া ঘিরে জিজ্ঞাসার প্রকৃতিপাঠ নিয়ে এগিয়ে যাওয়া, চরৈবতি নয় - ওতে যে আহরণ তাতে ক্ষুধার সংস্থানও নিহিত - এই বিচরণের ভবিষ্যতও অজানা নয় উপরে ওঠার কথাটা ঢেকে রেখেছে গাছগাছালি, আর পথও - তার দিকে অনবরতই চোখ রাখতে হয় সেখানে পিচ্ছিল কৌতুক -   সরুমোটা বালি, নুড়ি,  উপলখণ্ড, গডানো পাথরপিণ্ড মায়কি বিশালাকায়  চাঙ্গড় যা পথের বাধা হওয়ায় রাস্তারই ঘুরে যাওয়া মুখ, অনবরতই প্রসারণএর উদারতায় ছড়িয়ে পডা সঙ্কুচনএর সূঁড়িপথে জড়িয়ে পড়া এসব পেরোতে পেরোতে কখন দেখা যায় দিগ্বলযের বেড়ে যাওয়া তার ভেতরে নদী, জমির ওপর বালি দিয়ে আঁকা এ নদী বয় না, নিশ্চল দাঁডিযে থাকে, বোধএ এলো এটাই তাহলে ছিল উন্নতি, তলার জিনিসগুলো এখন তলার



দৃশ্যেরা এরকম স্থির দাঁডিয়ে গেলে মনে হতে পারে সেখানে কেউ ঘড়ির কাঁটাকে আটকে রেখে দিয়েছে তার দুহাত বাঁধা সেই ঘড়িরই দুই কাঁটায অথচ সেই অবিরাম টিকটিক বয়ে চলেছে নিরন্তর এটাও নয় যে সে শব্দ কেউ শোনে না, শোনে নি - হৃদয়ের আওয়াজ কে না শোনে নাড়ীর স্পন্দন কে না ছুঁয়ে দেখে, বার বার, শরীরের অনেক দোলা তাও অচলতা সন্দেহে শুনতে চাওয়া পেণ্ডলামের শব্দ



জমির ওপর স্থির ছবিরা দেয়ালছবি নয কেউ বা কোনটাই, ওদের ধরতে গেলে ধরা দেয ক্যামেরায় বা ক্যানভাসে কেউ মিলিয়ে মিলিয়ে হিসেবের অঙ্ক কষে দেখতে যায় না ছবিদের মিলিয়ে যাওয়া দেয়ালে বা অ্যালবামে তারা গ্রন্থের ভেতরকার মান্যতাপ্রাপ্ত হযে গেলেও জায়গারা কি ওরকম স্থির হয়ে আছে এখনো এ প্রশ্নটা আসেই না, ক্বচিৎ, পরের দেখা ঘটে গেলেও ছবির ভিন্নতা কিছু আপনাআপনিই বলে দেবে না, কেউ এসে না জানিয়ে দিলেও গল্পটা তো চলছিলও, চলছেও, ভেতরকার সব ঘটনা ছবিতে, দেখায়ও লেখা থাকুক বা নাই থাকুক খুঁড়লে তো বেরিয়েই আসে



সব বদলাওতেই নিহিত একটা তাগিদ যেটা মানুষের রামরাজ্যের বা রাবণরাজ্যের - একোহিঁ বাৎ  - কিম্বা জঙ্গুলে রাইফেলদের বা জেদি নতুন খলবলে খুঙ্খার সাম্রাজ্যবাদীদের, এই সব উন্নতি বা বদলে দেওয়ার আত্মপ্রসাদে আক্রান্ত ক্ষমতাবানদের জেদে নতজানু উলঙ্গ তৃষার্ত নদীরা আপন আপন হাড়পাঁজরসহ লোলজিব্হ নখদন্তে করাল দেহভাষায় রাক্ষুসে নাচ দেখাতে এগিয়ে আসছে

No comments:

Post a Comment

Facebook Comments